সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
শহিদুল ইসলাম:
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো কাঁধে ঝোলা আর মুখে আঞ্চলিক গানের অকৃত্রিম সুর বাঁশিতে তুলে অবিরত ৪০ বছর ধরে হাঁটছেন। ক্লান্তিহীন পথিকের বেশে বরিশাল বিভিন্ন জেলার পথে প্রান্তরে । “সব সখিরে পাড় করিতে নিবো আনা আনা” তোমার বেলায় নিবো সখি তোমার কানের সোনা”‘এমনি পাগল করা সুর যিনি বাশিঁতে তোলেন তাকে আমরা সাধারণত বলে থাকি বাঁশিওয়ালা। তার বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। এভাবে বাঁশি বিক্রির আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ব্রজেন্দ্রনাথ।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নে তার বাড়ি। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন গানবাজনা পাগল। বিভিন্ন মেলা- খেলা এবং হাট- বাজারে যেতেন বাবার সাথে। তার বাবা ও ছিলেন পেশায় একজন বাঁশি বিক্রেতা। পান্ডেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নিজ হাতে বাঁশি তৈরী এবং ব্যবসায়ীক পেশা ধরে রেখেছেন আজও। মুলিবাঁশের বাঁশি তৈরী করে সেসব বাঁশি বিক্রিয়ের লাভের টাকা দিয়ে চলছে ব্রজেন্দ্রনাথের সংসার। সংসার চালতে গিয়ে নিত্য দিনের চাহিদা মেটাতে বেকায়দায়ও পড়তে হয় তাকে। তার পরও মনে কোন দুঃখ নেই। নিজের বাঁশি বাজানোর বিদ্যাটুকু কাজে লাগিয়ে খুঁজে নেন চলার শক্তি। বাসিতে যে কোন গানের সুর তুলতে পারেন তিনি।আর এভাবে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ বাঁশির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর বাঁশ গুলো কিনে আনার পর প্রথমে বাঁশির মাফ অনুযায়ী বাঁশগুলো কেটে নিতে হয়।পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে বাঁশগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়।তারপর বাঁশগুলোতে বাঁশি তৈরীর উপকরণ যেমন- হাপরের আগুনে বাঁশগুলো পুড়িয়ে নিয়ে এবং রজন, স্প্রিট,চাচ দিয়ে শিরিশ মারার পর গরম লোহার রড দিয়ে বাঁশের বাঁশিগুলো ফুটো করতে হয়।প্রথমে চিকন রড তারপর মিডিয়াম তারপর মোটা রড দিয়ে বাঁশিগুলো ফুটো করতে হয়। এক্ষেত্রে মোটা চিকন সবমিলে ৫ টি রড লাগে। আঁড় বাঁশিতে সাধারণতো ৩থেকে ৪টি অথবা ৫/৭টি ফুটো থাকে। বাঁশিগুলোকে কয়েকটি শেণীতে বিভক্ত করা যায়।তন্মধ্যে এ,বি,সি,ডি এবং এফ কোয়ালিটির বাঁশিগুলো বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি বাঁশি তৈরীতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর প্রতিটি বাঁশি বিক্রি হয় ৩০/৪০/৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায়। পরিবারের সকলেই তাকে সাহায্য করে চলেছেন। বাঁশি পাইকারীও বিক্রি হচ্ছে বিশেষ করে আদিবাসীরা কিনে নেন। জমাজমি তেমন নেই, বাপ দাদার রেখে যাওয়া জমিটুকু তাদের ভরসা। বৈবাহিক জীবনে ৩ ছেলে মেয়ে। বড় দুই ছেলে বিবাহ করে আলেদা সংসার করছেন। মেয়ে ছোট লেখা পড়া করছে।বাঁশি বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার এবং দর্শনীয় স্থানগুলো,বাস টারমিনাল,অথবা ফুটপাত দিয়ে পায়ে হেটে ঘুরছেন শহরের আনাছে কানাছে। এতে বেচা বিক্রি ভালো হলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই পরিবার নিয়ে কোন রকম সংসার চলে। জীবন জীবিকার তাগিতে অনেক সময় বাউল গানের আসরে বাঁশি বাজান বলেও জানান তিনি। বাঁশি সর্ম্পকে তিনি আরো বলেন,বাঁশি বিক্রি হয়,কিন্তু বাশিঁর সুর কখনো বিক্রি হয় না। এটি আমার আত্মার খোরাক।মৃত্যু আগ পর্যন্ত এই বাঁশির সুর নিয়ে থাকতে চাই।